বেশিরভাগ মানুষই কখন করবা চৌথ ব্রতের নাম সেভাবে জানত না — যদি না এটি হিন্দি সিনেমায় ব্যাপক ব্যবহার হতো।

আঞ্চলিক উৎসবগুলির মধ্যে যেগুলি বলিউডের চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সর্বাধিক প্রচারিত হয়েছে, করবা চৌথ ব্রতটি তার মধ্যে অন্যতম। মুম্বইয়ের গণেশ উৎসবের মতো এর আবেদনও চলচ্চিত্রে অনস্বীকার্য। তবে গণেশ পুরাণে বর্ণিত একজন হিন্দু দেবতা। সেক্ষেত্রে বেশিরভাগ মানুষই কখন করবা চৌথ ব্রতের নাম সেভাবে জানত না — যদি না এটি হিন্দি সিনেমায় ব্যাপক ব্যবহার হতো।

বিবাহ-পরবর্তী রোম্যান্স বলিউডের একটি বহুবর্ষজীবী থিম এবং করবা চৌথ ব্রতটি তার জন্য উপযুক্ত। আধুনিক স্বাধীন মহিলারা যতই ঝাটকা দিতে সক্ষম হন না কেন, সেই প্রেক্ষিতে ফিল্মপ্রেমীরা কেবল বিবাহিত হিন্দু মহিলাদের প্রদর্শিত এই সূক্ষ্ম প্রেম এবং ভক্তিকেই বেশি পছন্দ করেছিলেন। তাঁদের কাছে স্বামীর মঙ্গল এবং দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি দিনব্যাপী উপবাস পালনের মাধ্যমে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কিন্তু আজকাল স্ত্রীদের পাশাপাশি অনেক স্বামীকেও উপবাস পালন করতে দেখে ভালো লাগে। যা এই ব্রতের একটি বেশ অপ্রচলিত একটি বার্তাকে বহন করে।

হিন্দু চান্দ্র মাসের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী কার্তিক মাসে, সাধারণত অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে, কোজাগরী পূর্ণিমার পর অন্ধকার পাক্ষিকের চতুর্থ দিনে এই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয়। পঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, হিমাচল প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের মতো উত্তর ভারতীয় রাজ্যগুলিতে মহিলারা এই ব্রত পালন করেন। তবে বিহার এবং পূর্বের অন্যান্য হিন্দিভাষী অঞ্চলে এটি ততটা জনপ্রিয় নয়। করবা দেবী, পার্বতী এবং চৌথ হলেন দেবী যাদের কাছে প্রার্থনা উৎসর্গ করা হয়, যখন শিব, গণেশ এবং কার্তিকেয়ের মতো দেবতাদেরও তাদের আশীর্বাদের জন্য পূজা করা হয়।

করবা চৌথ শব্দটি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত, 'কারবা', যার অর্থ নলযুক্ত একটি মাটির পাত্র এবং 'চৌথ'যার অর্থ চতুর্থ চন্দ্র দিবস। চাঁদ দেখা গেলেই নারীরা জল নিবেদন করে মাটির পাত্র দিয়ে। এটি স্পষ্টতই একটি লোক আচার কারণ কোন পুরোহিত এবং কষ্টকর আচার নেই। মহিলারা বিশ্বাস করেন যে এই উৎসবটি তাঁদের স্বামীদের নিরাপদ রাখার জন্য প্রার্থনা করা। যা মূলত শুরু হয়েছিল যারা যুদ্ধ করতে বা দূর দেশে ব্যবসা করার জন্য বাড়ি থেকে দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটাতেন তাঁদের মঙ্গল কামনা করে।

সেই হিসেবে দেখতে গেলে পৌরাণিক কাহিনী প্রচুর, সবচেয়ে পরিচিত একটি হল সাবিত্রী-সত্যবানের কাহিনী। নিবেদিতপ্রাণ স্ত্রী তার দৃঢ় সংকল্প এবং প্রার্থনা দিয়ে তার স্বামীকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনেন – অনেকটা বাংলার বেহুলার মতো। আরেকটি গল্প হল বীরবতী, সাত ভাইয়ের একমাত্র আদরের বোন। যখন তার ভাইরা তার স্বামীর জন্য এত কঠোরভাবে তার উপবাস দেখতে সহ্য করতে পারেনি, তখন তারা তাকে বিশ্বাস করায় যে চাঁদ উঠেছে। বীরবতী তার অনশন ভেঙেছিলেন কিন্তু শীঘ্রই তার স্বামীর মৃত্যুর ভয়ঙ্কর সংবাদ পান। তখন তিনি এক বছর ধরে আরও কঠোরভাবে প্রার্থনা করেছিলেন যতক্ষণ না দেবতারা তার স্বামীকে জীবিত করেন।

এই ধরনের লোক উৎসবগুলো সারা বিশ্ব থেকেই আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে — তবে বলিউড এই ব্রতটিকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

করবা চৌথের আগের দিন সন্ধ্যায়, মহিলার মা তার মেয়ের জন্য কাপড়, নারকেল, মিষ্টি, ফল এবং সিঁদুর এবং শাশুড়ির জন্য উপহারের ডালি পাঠান। এমনকি উপহারগুলির মধ্যে হিন্দু মহিলাদের বৈবাহিক নানান সামগ্রী যেমন, পায়ের আংটি, পায়ের পাতা, কাঁচের চুড়ি, সিঁদুর, বিন্দি/টিপ এবং আলতা প্রভৃতিও লক্ষ্য করা যায় ।

মহিলারা তাদের হাতে মেহেন্দি (মেহেদি) লাগান। করবা চৌথের দিন সূর্যোদয়ের আগেই পরিবারের সদস্যরা ঘুম থেকে উঠে পড়েন। বিবাহিত মহিলারা শাশুড়ির দেওয়া তাজা ফল, শুকনো ফল, মিষ্টি, চাপাটি এবং শাকসবজি দিয়ে তৈরি খাবার খান। শেষ বিকেলে, মহিলারা তাদের নিজ নিজ থালি নিয়ে একত্রিত হয় যাতে রয়েছে নারকেল, ফল, শুকনো ফল, একটি দিয়া (প্রদীপ), এক গ্লাস কচি লস্যি (দুধ এবং জল দিয়ে তৈরি একটি পানীয়), মিষ্টি মাথরি এবং উপহারগুলি নিয়ে গৌরা মা (দেবী পার্বতী) এর মূর্তিকে ঘিরে রাখেন। সেই সময় করবা চৌথের গল্পটি একজন অভিজ্ঞ বয়স্ক মহিলা বর্ণনা করেন। তারপরে তারা থালিগুলিকে বৃত্তের চারপাশে ঘোরাতে শুরু করেন। একে থালি বাটানা বলা হয়। এই সময় তারা লোকগানও গাইতে শুরু করেন।

এরপর একটি চালনির মধ্যে দিয়ে তারা আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে তাদের উপবাস ভঙ্গ করেন। চাঁদকে লস্যি নিবেদন করে তাদের স্বামীদের জন্য প্রার্থনা করে উপবাস ভঙ্গ করেন।

এই ধরনের লোক উৎসবগুলো সারা বিশ্ব থেকেই আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে — তবে বলিউড এই ব্রতটিকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

No comments on 'করবা চৌথ '

Leave your comment

In reply to Some User