এই সময়েই গরীব মানুষের সব থেকে বেশী প্রয়োজন ছিল সাহায্যের যা তাদের দারিদ্র্য সীমার ওপরে রাখতে পারত। পরিবর্তে মোদী তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে ধনীদের আরো ধনী করেছেন।

কিছুদিন আগে ডঃ কৌশিক বসু, ভারত সরকারের প্রাক্তন প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ও পরবর্তী কালে বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বলেন যে প্রধানমন্ত্রী মোদীর আর্থিক পুনরুদ্ধার নিয়ে উল্লসিত হবার কোন কারণ নেই। উনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বলেন যে মোদী ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৮.২% (২০১৬-১৭) থেকে -৭.৩% (২০২০-২১) এ নিয়ে এসেছেন। ১৯৪৭ থেকে ভারতে বছর বছর বৃদ্ধির হার এত নীচে নামেনি বিগত পাঁচ বছরে যা নেমেছে।

এই সময়েই গরীব মানুষের সব থেকে বেশী প্রয়োজন ছিল সাহায্যের যা তাদের দারিদ্র্য সীমার ওপরে রাখতে পারত। পরিবর্তে মোদী তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে ধনীদের আরো ধনী করেছেন। ভারতের প্রথম ১৪২ জন ধনকুবেরদের ধন বৃদ্ধি হয়েছে ২২ লাখ কোটি টাকা(২০১৪) থেকে বর্তমানে ৫৩ লাখ কোটি টাকায়। দেশের শীর্ষে অবস্থিত ১০০ জন কর্পোরেট মালিকদের আয় বিগত পাঁচ বছরে ৩৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ লাখ কোটি হয়েছে। কেন্দ্রের আনুকূল্য ব্যতীত এ সম্ভব নয় কারণ আর্থিক নীতি ও সুবিধা নির্ধারণ তারাই করে।এই একই সময়ে মোদী গরীব মানুষকে রক্ষা করতে ব্যর্থ তো হয়েছেন-ই ও প্রায় ১২ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমায় পৌঁছে গেছে গত দু বছরে।

গত বছর এই সময় তিনি যা করেছিলেন এ বছরও মোদী ভাব করছেন যেন করোনা অতীত হয়ে গেছে যদিও কিছু দেশে আবার নতুন করে অতিমারী ও মৃত্যু দেখা দিচ্ছে।গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কয়েক লক্ষ লোকের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ছিল সময়মত মোদীর অতিমারীকে গুরুত্ব না দেওয়া।

এই রূঢ় বাস্তব সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী সাম্প্রতিক বাজেটে খাদ্যবস্তুর ওপর ৮০,০০০ কোটি টাকার ভর্তুকি কমিয়ে দিয়েছেন ও জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা আইন (NREGA) এর ধারায় ১০০ দিনের কাজে ৩৮,০০০ কোটি টাকা কমানো হল। এ ক্ষেত্রে তাঁদের এই প্রকল্পে ১০০ লাখ কোটি টাকা বৃদ্ধি করাটাই ন্যায্য হত কারণ নারেগার বকেয়া বিলের পরিমাণ-ই ২১,০০০ কোটি টাকা ও সবাই জানেন দরিদ্র মানুষই সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্থনীতি মন্দা হলে। গ্রামীন উন্নতি ও সামাজিক বিকাশ প্রকল্প ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বেশ কিছুটা ছাঁটা হল। আমরা দুটি ক্ষেত্রে নজর দিলে দেখতে পাব মোদীর ঔদাসীন্য কয়েক কোটি মানুষকে কি চরম দুর্দশার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে ৮৬,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় যখন মনে করি কি অস্বাভাবিক শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পড়তে হয়েছিল । গত বছর এই সময় তিনি যা করেছিলেন এ বছরও মোদী ভাব করছেন যেন করোনা অতীত হয়ে গেছে যদিও কিছু দেশে আবার নতুন করে অতিমারী ও মৃত্যু দেখা দিচ্ছে।গত বছর করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কয়েক লক্ষ লোকের মৃত্যুর একমাত্র কারণ ছিল সময়মত মোদীর অতিমারীকে গুরুত্ব না দেওয়া। নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে যদিও কেন্দ্র সরকার তা মানতে নারাজ। আসল কথা আমাদের অর্থের প্রয়োজন অতিমারীর মোকাবিলা করার জন্য ও ১০০ কোটি মানুষকে তিন ডোজ টিকা দেবার জন্য যাতে ভবিষ্যতেও ভারত অতিমারীর কবল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। এর জন্য দরকার অর্থের কিন্ত মাত্রাতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ফল মারাত্মক।

মোটামুটি ভাবে দেখা যায় যে ভারত তার জিডিপির ৩.৫% স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করে।বিশ্বের উন্নত দেশগুলি তাদের জিডিপির ১০ থেকে ১৫% অবধি এই খাতে ব্যয় করে। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও চিলি করে ১০% যেখানে তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কিরগিস্তানের ব্যয়ের পরিমাণ ৭%। চীন, রাশিয়া এমনকি নেপাল পর্যন্ত তাদের জিডিপির ৫ .৫% থেকেই ৬ % খরচ করে স্বাস্থ্য খাতে যেখানে ভারত লজ্জাদায়ক ৩.৫ % এর ওপর উঠতেই পারছেনা কারণ মোদী ভালবেসে উচ্চশ্রেণীর জন্য এনেছেন বুলেট ট্রেন এবং ২০,০০০ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি করছেন সেন্ট্রাল ভিস্তা নিজের অমরত্ব লাভের জন্য। তাঁর সময়কালে কেন্দ্র সরকার স্বাস্থ্য খাতে অধিক ব্যয়ের কোন প্রকার উৎসাহই দেখায়নি যদিও মোদী তাঁর গর্বের প্রকল্প রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশনের উল্লেখ প্রায়শই করে থাকেন। গত বছর থেকে এই বছরে খরচের পরিমাণ খুব একটা বৃদ্ধি পায়নি- কেবলমাত্র ৩৪,০০০ কোটি টাকা। সেই তুলনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প অনেক কল্যাণমূলক ও বহু মানুষ এতে উপকৃত হবেন। এছাড়াও মোদীর প্রকল্পটি বীমা কোম্পানিদের লাভবান তো করবেই।

মোদী ও নির্মলা সীতারামন দুজনেই শিক্ষাকে কোনরূপ প্রাধান্য দেননা। তাঁরা নূতন শিক্ষা প্রকল্পের প্রচার করেন অথচ সেই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার প্রয়োজন বোধ করেননা। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোট বাজেট ৬% কমে ২০২০-২১-য়ের ৯৯ হাজার কোটি টাকার থেকে ৯৩ কোটিতে এসে ঠেকেছে যা গত তিন বছরের মধ্যে সব চাইতে কম। স্কুল শিক্ষার ক্ষেত্রে বাজেট সর্বাধিক ছাঁটা হয়েছে- প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ১০০০ কোটির কাছাকাছি থেকে কমিয়ে চলতি বছরে ৩৮. ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অবদান যা পাঁচ বছর পূর্বে জিডিপির ১.০৭% ছিল তা গত বছর ১% - য়েরও কম করেন যা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক। উল্লেখনীয় গরীব রাজ্যগুলি তাদের জিডিপির ৩.৫% শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যয় করে। মোদী ডিজিটাইজেশন নিয়ে অনেক কথা বলেন কিন্ত করোনার প্রকোপ যখন দেশের ১ .৫ কোটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩২ কোটি ছাত্র ছাত্রীদের ওপর পড়ল মাত্র ১৫% শিক্ষার্থীরা গ্রামীণ এলাকায় ও ৪২% শিক্ষার্থীরা শহর এলাকা থেকে নেটের সুবিধা ভোগ করতে পেরেছে। কারণ অনেকের কাছেই কম্পিউটার, ল্যাপটপ , ট্যাবলেট বা স্মার্টফোন ছিলনা নেটের মাধ্যমে পড়ার জন্য। এই কারণেই সাম্প্রতিক বাজেটে শিক্ষার বরাদ্দ আরোই নিন্দনীয়।

No comments on 'মোদীর বাজেটে উপেক্ষিত সাধারণ মানুষের সমস্যা'

Leave your comment

In reply to Some User