সাবধানে গাড়ি চালান, মনে রাখবেন রাস্তায় কুকুর-বিড়াল মরলে আপনাকেই খেতে হবে।— এ রকম নানান রসিকতা গত কিছু দিন ধরে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের হাতে হাতে ঘুরছে। বিপাকে পড়লে বাঙালির বুদ্ধি খোলে, রসের বান ডাকে। বিপাক বইকী— মাংস খাওয়া বাঙালির এমনই অভ্যেস যে ভাগাড় থেকে হরেক রকমের মাংস সরবরাহ হয়ে আসছে জেনে অনেকেরই অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসার জোগাড়! ঘড়া ঘড়া গঙ্গাজলেও এই পাপের ক্ষালন হওয়ার নয়। তা ছাড়া গঙ্গাজলে তো কলুষ আরও বাড়বে, কারণ সেই যে মোদীজি এবং উমা ভারতী গঙ্গাকে স্বচ্ছ করবেন বললেন, তার পর থেকে পতিতোদ্ধারিণী আরও দূষিত হয়েছে।
বাঙালির মাংস খাওয়া ইদানীং ভয়ানক ভাবে কমে গিয়েছে। রাস্তার ধারে চিকেন রোল কিনে খেতে গেলে এখন বুকের পাটা লাগে। রান্না করা মাংস দেখলে তো বুক কেঁপে ওঠে, কোন ভাগাড়ের কোন প্রাণী তার উৎস, কে জানে বাবা! মাছ আর ডিমের কদর বেড়েছে, হয়তো দরও। এমনকি প্রায় পাঁচশো বছর আগে শ্রীচৈতন্য যাকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা করে তেমন সফল হননি, সেই গাছপাঁঠাও নাকি বীরবিক্রমে বাঙালির রসনার দখল নিয়েছে। সত্যি বলতে কী, সমস্ত ভাগাড়-বিশুদের যদি ধরে ফেলা হয় এবং এই ধরনের সমস্যা বন্ধ করার সব ব্যবস্থা করা হয়, তা হলেও অনেক বাঙালিই বোধহয় চট করে অন্তত বাড়ির বাইরে মাংস খাওয়ার সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারবেন না।
কিন্তু আমাদের মহান ঐতিহ্যের তা হলে কী হবে? ভারতের জনগণনা সংস্থার রেজিস্ট্রার জেনারেল মাত্র চার বছর আগে এক বিশদ সমীক্ষা করিয়েছিলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, গোটা দেশে বাঙালি হল সবচেয়ে বেশি আমিষাশী— ৯৮.৫৫ শতাংশ বাঙালি মাছ-মাংস খান, রাজস্থানে যে অনুপাতটি মাত্র ২৫ শতাংশ। তিনটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি আছে: অন্ধ্র, ওড়িশা ও কেরল, সেগুলিতে শতকরা মোটামুটি ৯৭-৯৮ জন আমিষ খান। ভারতের অন্য রাজ্যের লোকে বাঙালি ব্রাহ্মণকে আমিষ খেতে দেখে হেসেছেন, কিন্তু আমাদের পণ্ডিতরা তাঁদের ব্রহ্মবৈবর্ত এবং বৃহদ্ধর্মপুরাণের কথা খেয়াল করিয়ে দিতে ভোলেননি। বাঙালি ব্রাহ্মণের বুদ্ধি কেন চিরকালই বেশি, কেনই বা তাঁরা ভারতের নবজাগরণের পুরোধা হতে পেরেছিলেন, তার একটা উত্তরও এখানে নিহিত আছে। মনে রাখতে হবে, বঙ্গদেশে অসংখ্য জলাশয়, আর সেখানে অফুরন্ত মাছ, তাই মাছই এখানকার মানুষের প্রোটিনের প্রধান উৎস। আর, মাছ খেলে যে বুদ্ধি বাড়ে, সে কথা তো পি জি উডহাউসের গল্পের মহাবুদ্ধিধর জিভসও জানত।
বস্তুত, বাংলার জমি এবং আবহাওয়া এত ভিজে বলে এখানে কোনও দিনই ডাল খুব বেশি হত না— যে ডাল প্রোটিনের আর একটি ভাল উৎস। যেটুকু ডাল হত, তার অনেকটা দিয়ে আবার বড়ি তৈরি করা হত। অনেকের ধারণা, বাংলায় শ্রীচৈতন্যের আন্দোলনের পরেই বাকি ভারতের সঙ্গে এই অঞ্চলের যোগাযোগ বাড়ে এবং তখন ডাল খাওয়ার প্রচলন হয়, বিশেষত নিরামিষাশী নতুন বৈষ্ণবদের প্রোটিনের চাহিদা মেটাতেই অন্য রাজ্য থেকে ডাল আমদানি শুরু হয়। কিন্তু আসলে এখানে ডালের বহুলপ্রচলন শুরু হয়েছে অনেক পরে, তত দিনে বেশির ভাগ বাঙালি স্থির করে ফেলেছেন যে, তাঁরাই হবেন ভারতের একমাত্র আমিষাশী বৈষ্ণব। তবে আজ পর্যন্ত বঙ্গভূমিতে অনেকেই ঠিক করে উঠতে পারেননি, ডালটা কখন খাবেন— খাওয়ার শুরুতে না শেষে।
কিন্তু এটা ভাবলে খুব ভুল হবে যে, বাঙালিরা সবাই সর্বদা মাংসাশী ছিল। মনে রাখতে হবে, অধিকাংশ মানুষ তিনটি বৃত্তির মধ্যে কোনও একটি দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন: শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ, পশুচারণ এবং মাছ-ধরা। মধ্যযুগে এই তিন বৃত্তির লোকেরাই, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে, চাষের কাজে এলেন— ‘ব্যাধে গোপে জেলে/ তিনই হল হেলে’। তাঁদের নীচে অবশ্যই আরও অনেক প্রান্তিক গোষ্ঠী ছিল।
মাংসের কথায় ফেরা যাক। বাংলার নানা উপপুরাণে এবং জীমূতবাহনের কালবিবেক, ভবদেব ভট্টের প্রায়শ্চিত্ত-প্রকরণ, সর্বানন্দের টীকাসারভাষ্য ইত্যাদিতে আর বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যে সে সময়ের মানুষ কী কী মাংস খেতেন তার একটা বেশ ভাল পরিচয় পাই। সেই তালিকায় ছিল হাঁস, ছাগল (পুরুষ ও স্ত্রী), হরিণ, পায়রা, খরগোশ, গোসাপ (কালকেতুর আখ্যান স্মরণীয়), কচ্ছপ এমনকি শজারু। আজ খুব পাঁড় মাংসাশীও গোসাপ বা শজারু খেতে পারবে বলে মনে হয় না। হিন্দুসমাজের উচ্চকোটির মানুষ এই সব রকম মাংস খেতেন কি না তা পরিষ্কার নয়। তবে তিন রকম মাংস তাঁদের খাদ্যতালিকায় পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল। গোমাংস ভক্ষণের ব্যাপারটা সারা দেশেই হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে এক গভীর বিভাজন রেখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। যে সব নিম্নবর্গের মানুষ গরু খাওয়া বজায় রাখলেন, তাঁরাও সেটা বিশেষ জাহির করতেন না। এ ছাড়া, শুয়োর এবং মুরগি নিয়েও উচ্চবর্গের হিন্দুদের একটা ছুতমার্গ ছিল— এরা যা-নয়-তাই খেয়ে বেড়ায়, তাই খুব নোংরা বলে প্রতিপন্ন হত। মুসলমানরা অবশ্যই শুয়োর ছুঁতেন না, কিন্তু নিম্নবর্গের হিন্দুরা তার মাংস খেতেন। অন্য দিকে, এই সে দিনও হিন্দুরা মুরগি একটি নিষিদ্ধ মুসলমানি খাদ্য হিসেবেই গণ্য করতেন। এখন অবশ্য চিকেন একেবারে সর্বজনীন। এখানে একটা কথা বলা দরকার। দেড়শো বছর আগে ডিরোজিয়ো তাঁর ছাত্রদের শিখিয়েছিলেন, গোমাংস হল ‘মুক্তি’র প্রতীক। তবুও অধিকাংশ হিন্দু বাঙালি আজও গোমাংসকে দেখেন ভয় বা ঘৃণার চোখে, ঠিক যেমন ধর্মভীরু মুসলমান শুয়োর ছুঁতেও রাজি নন।
বাংলায় তুর্কি শাসনের শুরু থেকেই উচ্চবর্ণের হিন্দুরা সতর্ক ছিলেন, যাতে শাসকদের সংস্পর্শে তাঁরা ‘অশুচি’ হয়ে না যান। মুরগি, পিঁয়াজ বা রসুনের মতো মুসলমানি খাদ্য তাঁরা ছুঁতেনও না। অবশ্য একটা সত্য খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাভাষীদের মধ্যে তিন ভাগের দু’ভাগই ধর্মে মুসলমান। তবে এটা একটা ভুল ধারণা যে মুসলমানরা বরাবর গোমাংস খেয়ে এসেছেন। ঘটনা হল, হিন্দু বা মুসলমান, খুব কম বাঙালিরই গরুর মাংস কেনার সামর্থ্য ছিল। তা ছাড়া একটা গরু কাটলে অনেক মাংস হয়, মোষ হলে তো আরও বেশি। বড় বা মাঝারি শহর ছাড়া মাংসের দোকান বিশেষ ছিল না যে, প্রয়োজন মতো অল্প করে কেনা যাবে। তাই গরু-মোষের মাংস খাওয়া হলেও তা হত বড় কোনও অনুষ্ঠানে। মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে একটা জাল-দেওয়া ছোট আলমারি থাকত, ‘মিট সেফ’ বলা হত— এখন তা উধাও হয়ে গিয়েছে। মিট সেফ ব্যাপারটা বাঙালি ফিরিঙ্গি বা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের থেকে নিয়েছিল, তাঁরা ওর মধ্যে রান্না-করা মাংস দু’এক দিন রেখে দিতেন। তবে বাঙালি ঘরে অনেক সময়েই মিট সেফের পায়াগুলি ছোট ছোট জলের পাত্রের মধ্যে বসিয়ে রাখা হত, যাতে তার মধ্যে খাবার রাখলে পোকামাকড় সে খাবারের নাগাল না পায়। সে যা-ই হোক, একটা ব্যাপার বোঝা যায়। মাংসের অর্থনীতি, পচে যাওয়ার সমস্যা এবং যৌথ পরিবারের ভাঙন, সব মিলিয়েই তুলনায় ছোট প্রাণী বা পাখির মাংসের দিকে ঝোঁকটা বেশি পড়েছে। এই সূত্রে হাঁসের মাংস বিষয়ে একটি ছড়া মনে পড়ে: জামাইয়ের নামে মারে হাঁস/ গুষ্টিসুদ্ধ খায় তার মাস।
কিছু বিলেতফেরত বাঙালি সাহেব অন্যদের চেয়ে একশো বছর আগে চিকেন ধরেছিলেন বটে (রবীন্দ্রনাথের বিনি পয়সার ভোজ-এর ‘ধরো হুইস্কি সোডা আর মুর্গি-মটন’ স্মরণীয়), কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি বাড়িতে রামপাখির প্রবেশ ১৯৭০-৮০’র দশকে, কিংবা তারও পরে। শুরুটা হয় মামলেট (ওমলেট) দিয়ে— প্রসঙ্গত, হাঁস এবং কচ্ছপের ডিমেরও কদর ছিল। তার পরে ক্রমশ একটা যুক্তির উদয় হল: বাড়িতে কারও শরীরস্বাস্থ্য ভাল করার জন্যে চিকেন খাওয়ানো দরকার। দেখতে দেখতে বাংলা জুড়ে পোলট্রির প্রসার ঘটল, ‘পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন’ ব্রয়লারের ভান্ডার উপচে পড়ল।
বাঙালির খাওয়াদাওয়া নানা ভাবেই বদলে যাচ্ছিল। পঞ্চাশ-ষাটের দশকে খাদ্যের অভাব, রেশনের দাপট, সব মিলিয়ে আমরা রুটি ধরলাম, বাদাম তেলকে মেনে নিলাম, এমন নানা ব্যাপারে আমাদের হেঁশেলের চরিত্র পালটে গেল। আশির দশকে দেখতে দেখতে সাম্রাজ্য বিস্তার করল ‘চাইনিজ’, রাস্তার ধারে সস্তা চাউমিন হয়ে উঠল সর্বহারার খাবার, অফিসের কর্মী থেকে কলেজের ছাত্রছাত্রী— কম পয়সায় পুষ্টির জনপ্রিয়তা হুহু করে বেড়ে গেল। এখানেও বিশেষ সমাদৃত হল ‘চিলি চিকেন’। বেচারি মুড়ি-তেলেভাজা আর শিঙাড়া-কচুরির আদর কমে গেল সেই অনুপাতেই। এই দশকগুলিতেই, মাইনেপত্র এবং বোনাস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির ঘরে জোর কদমে ঢুকেছে প্রেশার কুকার, গ্যাস আভেন, ফ্রিজ, পাশাপাশি এসেছে মিক্সি আর গুঁড়ো মশলা। আমাদের রান্না এবং খাওয়াদাওয়ার দুনিয়াটাই দেখতে দেখতে বেবাক পালটে গেল।
বাঙালির খাওয়াদাওয়ার বিবর্তন অবশ্য অনেক দিন ধরেই চলছে। পর্তুগিজরা ষোড়শ শতকে লঙ্কা আর আলু এনেছিল। আঠারো-উনিশ শতকে ব্রিটিশরা নিয়ে এল টম্যাটো, বিট, গাজর, ফুলকপি ইত্যাদি। তবে জমিদার শ্রেণি এবং সম্পন্ন মানুষের মধ্যে মাংস খাওয়ার রমরমা শুরু হল ১৮৫৬ সালের পরে, যখন অযোধ্যার গদিচ্যুত নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ কলকাতায় বাসা বাঁধলেন। যত বাবুর্চি আর খানসামা তাঁর পিছু পিছু শহরে এলেন, তাঁদের সবাইকে ভরণপোষণের সামর্থ্য তাঁর ছিল না। অন্য দিকে, একঘেয়ে খাবার খেয়ে খেয়ে বড়লোক বাঙালির অরুচি ধরে গিয়েছিল। মনে রাখতে হবে, চার শতাব্দীর বেশি সময় ধরে নানান জায়গা ঘুরে ঘুরে মুঘল খানাপিনা পরিমার্জিত হয়েছে— সমরকন্দ, বুখারা, কাবুল, দিল্লি, আগরা, লাহৌর, ফৈজাবাদ এবং শেষে লখনউ। উচ্চবর্ণের হিন্দুরা কত দিন আর মন-মাতাল-করা গোলাপজল, ঝাড়বাতির আলোয় হিন্দুস্তানি উচ্চাঙ্গসঙ্গীত এবং ঘুঙুরের আকর্ষণ উপেক্ষা করে থাকবেন? অচিরেই সূক্ষ্ম মসলিন আর আদ্দির পোশাক জমিদারবাবুদের অঙ্গে উঠল, সঙ্গে এল আতর, সুগন্ধি পান, জলসা এবং অবশ্যই বুলবুলি আর ঘুড়ির লড়াই। বাঙালি মেয়েরা এবং সমাজের অন্য বর্গের মানুষ অবশ্য এই নতুন চালে অভ্যস্ত হতে আরও কয়েক দশক বেশি সময় নিল। তবে ক্রমশ আমাদের সাদাসিধে ঝাল-ঝোল-অম্বলে তেল-মশলায় সমৃদ্ধ মোগলাই রান্নার প্রভাব পড়ল এবং বাঙালির পাতে কচি পাঁঠার জায়গা নিল খাসি-মাটন। বাঙালি তার কষা মাংসের মতো পদগুলিকেও মোগলাই রান্নার ধাঁচে কিছুটা পালটে নিল, দেখতে দেখতে মধ্যবিত্ত বাড়িতে রবিবারের দুপুরে কিংবা বিয়েবাড়ির ভোজে অথবা পিকনিকে মশলা-সমৃদ্ধ মাংসের জয়জয়কার। আহা, বিয়েবাড়ির কথায় মনে পড়ল, রাত্রের খাওয়াদাওয়ার পরে যে মাংস বেঁচে যেত— পরের দিন, বাসি বিয়ের সকালে তার স্বাদ যেন দ্বিগুণ খুলত! আমাদের সেই পুরনো ঠাকুরদের রান্নার হাতই ছিল আলাদা, আজ খুব কম কেটারারই তেমনটা রাঁধতে পারেন।
এ কালের কথায় যদি ফিরে আসি, সত্তরের দশক থেকে পাড়ায় পাড়ায় ফুটপাতের ধারে গজিয়ে উঠল রোল কর্নার, তথাকথিত মোগলাই খাবার মিলতে শুরু করল যত্রতত্র। মুসলমানি খানার জন্যে আর কর্পোরেশন-ধর্মতলা, চিৎপুর বা খিদিরপুর দৌড়নোর দরকার থাকল না, সেই খাবার আমাদের পাড়ায় পাড়ায় চলে এল। গত দশ-বারো বছরে শুরু হয়েছে শহরের সর্বত্র ফুটপাতে সরাসরি হাঁড়ি থেকে বিরিয়ানি পাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা। চিকেন এবং মাটনের চাহিদা অসম্ভব বেড়েছে, কোথা থেকে এত মাংস আসে তা নিয়ে নানা রকম রসিকতাও চালু হয়েছে অনেক দিন, কিন্তু আমরা কেউ ভয়াবহতম দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি, ভাগাড় থেকে নানা মৃত পশু সরাসরি আমাদের পেটে ঢুকে যাচ্ছে! খাবারে এবং লাইফস্টাইলে বাঙালি হয়তো ক্রমশ খুব দুঃসাহসী হয়ে উঠেছে। এখন আর লড়াইটা ‘যাদের আছে’ এবং ‘যাদের নেই’ তাদের নয়, দ্বন্দ্ব এখন ‘যাদের আছে’ এবং ‘যাদের পেতেই হবে’, এই দুই দলের মধ্যে। এই ‘লুম্পেন বুর্জোয়া’দের একটা অংশের মূল্যবোধ একেবারে ভাগাড়ে চলে গিয়েছে।
তবে উৎসা রায় তাঁর চমৎকার গবেষণা-সমৃদ্ধ বইয়ে দেখিয়েছেন, আমিষ খাবারের প্রতি বাঙালির এই আকর্ষণ খুব বেশি দিনের নয়, অনেক মধ্যবিত্তের বাড়িতেই বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানে মাত্র একশো বছর আগেও সম্পূর্ণ নিরামিষই খাওয়ানো হত। বাইরে খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের হয়তো আবার সেই নিরাপদ খাবারেই ফিরতে হবে। পুরনো একটা কথা মনে পড়ছে: মাংসে মাংস বাড়ে/ ঘৃতে বৃদ্ধি বল/ দুধেতে সকলই বৃদ্ধি/ শাকে বৃদ্ধি মল।
প্রশ্ন হল, এই দুষ্টচক্রের স্বরূপ পুরোপুরি উন্মোচন করে আসল অপরাধীদের ধরা হচ্ছে না কেন। পুরসভা এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একাংশের মদত ছাড়া কি এত বড় অপরাধের চক্র এ ভাবে চলতে পারে? কিন্তু তারা কারা? এ তো কেবল অপরাধ নয়, এ একেবারে আমাদের রসনার সংস্কৃতির তলপেটে লাথি মারা!