Bangla Language। বাংলা ভাষা
-
বেচারামের নয়া ফন্দি Bad Bank
অনেকেই বোধহয় নরেন্দ্র মোদীর ‘Bad Bank’ নামক নূতন এক ফন্দির কথা শোনেন নি। এই ব্যাংকের ভাল নাম অবশ্য বেশ গালভরা National Asset Reconstruction Company Ltd, বা এন এ আর সি এল যার মানে জাতীয় সম্পদ পুনর্গঠন কোম্পানি। মোদীর মন্ত্রিসভা গত ১৫ সেপ্টেম্বরে এর অনুমোদন দিয়েছে। এই সংস্থাকে অর্থনীতিবিদরা bad বলার কারণ এর কাজ হল সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের যত bad বা অনাদেয় ঋণ এটির ঘাড়ে চাপান হবে। এই ব্যাংকটি অনেকখানি নীলকণ্ঠের মতন হয়ে উঠবে।
-
নরেন্দ্র মোদীর বেসরকারিকরণ পাইপলাইন
চলতি বছরের বাজেট অধিবেশনে নরেন্দ্র মোদী সরকার ঘোষণা করল যে ২০২১-২২-এ বিলগ্নীকরণ মারফত ১.৭৫ লাখ কোটি টাকা জোগাড় করবে। যে সব জাতীয় সম্পদের উপর থেকে সরকারী নিয়ন্ত্রণ তুলে মোদী সংস্থা বিক্রি করতে চলেছেন তার মধ্যে আছে আই ডি বি আই ব্যাংক, ভারত পেট্রোলিয়ম, শিপিং কর্পোরেশন এবং এয়ার ইন্ডিয়ার মত বৃহৎ কোম্পানি। বলা বাহুল্য এর একটিও অবশ্য তাঁর তৈরি নয় কিন্তু কোন অধিকারে তিনি এগুলি বেচতে চলেছেন এই সব মৌলিক প্রশ্ন বা বিতর্ক তুলে সময় নষ্ট না করাই ভালো।
-
সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও বাহুবল?: সদ্যসমাপ্ত সংসদ অধিবেশন দেখল দায়বোধ-বিরহিত সরকারকে
বিগত সংসদের অধিবেশন পূর্বঘোষিত সমাপ্তির আগেই মুলতুবি করে সরকার যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। এই চার সপ্তাহে বোঝা গেল, এই সরকার অসহিষ্ণুতা ছাড়া আর কোনও আচরণই বোঝে না। নরেন্দ্র মোদী যতই জনসমর্থন হারাচ্ছেন, ততই তাঁর অসহিষ্ণু স্বরূপ দেখাচ্ছেন। সদ্য প্রকাশিত একটি সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, তাঁর জনপ্রিয়তা গত এক বছরে ৬৬ শতাংশ থেকে এক ধাপে পড়ে গিয়েছে ২৪ শতাংশে।
-
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় এবং ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম দশক
১৯৪৮ থেকে ১৯৬২ অবধি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় আজ থেকে ঠিক ৫৯ বছর আগে জুলাইয়ের এই প্রথম দিনে কলকাতায় তাঁর বাসভবনে প্রয়াত হন। তাঁর সুশৃঙ্খল স্বভাব, নির্ভুলতা, যুক্তিবাদ এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য তিনি সাধারণের কাছে বহুল জনপ্রিয় এক নেতা ছিলেন। পৃথিবীতে প্রবেশ ও প্রস্থানের দিনটিকে এক রেখে, কীভাবে ঠিক আশি বছর বয়সে নিজের প্রস্থানমুহূর্তটি বেছে নিয়েছিলেন তিনি, তা তাঁর গুণমুগ্ধদের কাছে অনেকখানি অবাক করে দেওয়া এক বিরল ঘটনা নিশ্চয়ই৷
-
ভাবমূর্তি এখনও অটুট: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোদীর জনপ্রিয়তা কমাতে পারল কি?
বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দশা দেখে অনেকেই মনে করছেন তাঁর দিন বোধহয় ঘনিয়ে এসেছে। কিন্তু না, এখনও অবধি এই পুলকের সত্যি কোনও কারণ নেই। অতিমারি মোকাবিলায় তাঁর চূড়ান্ত ব্যর্থতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রথমে সীমিত ছিল শহরবাসীদের মধ্যে। দোরগোড়ায় মৃত্যুর তাণ্ডব দেখে তাঁরা আতঙ্কিত হন। আর এই মারাত্মক সংক্রমণ তাঁদের প্রতিষ্ঠা, প্রভাব ও ক্ষমতাকে কোনও পাত্তাই দেয়নি।
-
রাজধানীতে দম্ভের সৌধ: দেশের সব প্রয়োজন অগ্রাহ্য করে এই প্রকল্পের জন্য এত খরচ!
যাঁরা নরেন্দ্র মোদীর সেন্ট্রাল ভিস্টা প্রকল্পে মহামান্য আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন, ৩১ মে দিল্লি হাই কোর্টের কড়া ভাষায় তিরস্কার তাঁদের কাছে সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকরাও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছেন দু’টি ঘটনা দেখে— এক, উচ্চ আদালতগুলিতে সেন্ট্রাল ভিস্টার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলির শুনানি কী দ্রুত হচ্ছে, আর মামলা খারিজ হয়ে যাচ্ছে চটপট; এবং দুই, প্রধানমন্ত্রী কী দক্ষতার সঙ্গে দেশের বিক্ষোভের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন সেন্ট্রাল ভিস্টার দিকে।
-
'এ বার না হয় মুখ্যমন্ত্রীকেই শো-কজ় করুন'
রাজ্যের সদ্য অবসর নেওয়া মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘শো-কজ়’ (কারণ দর্শানোর) নোটিস পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তাতে সই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারির। কিন্তু বলতেই হচ্ছে, ওই চিঠির খসড়া যথেষ্ট ‘দুর্বল’। ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৫১ নম্বর ধারায় তা পাঠানো হয়েছে। তারিখ ৩১মে, যাতে বোঝা যায় যে, আলাপনের অবসরের আগেই তা তাঁকে পাঠানো হয়েছিল।
-
প্রশ্নটা বাঙালির আত্মরক্ষার
ভারতের অন্য লোকেরা বলে বাঙালি ভোট নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করে আর রাজনীতিতে এতই ব্যস্ত থাকে যে, অর্থনীতির জন্যে কোনও সময়ই নেই। এ কথাটি অনস্বীকার্য যে, রাজনীতি আমাদের মধ্যে অনেকখানি মজ্জাগত। এবং তার সঙ্গে সঙ্গেই মনে রাখতে হবে যে, স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙালির দেশপ্রেম, উৎসাহ, সাহস ও বলিদান সত্যিই অতুলনীয়।
-
বাংলার মানুষেকে এবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে
নির্বাচনের ঘণ্টা বাজার অনেক আগে থেকেই প্রচুর অভিযোগ, আশ্বাস, বিবৃতি আর বক্তব্যে আবহাওয়া গরম হয়ে উঠেছে। এইসবের মাঝে যে প্রস্তাবটি নকশালপন্থী নেতা দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বিহারের নির্বাচনের পরেই দিয়েছিলেন অনেকের কাছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। তিনি বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে একসঙ্গে লড়ার জন্যে আবেদন করেছেন। তা না করলে ওই বৃহৎ শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও অপ্রতিরোধ্য দলের আক্রমণের হাত থেকে কেউই বাঁচবেন না। যে যাই বলুক, আমাদের মানতেই হবে যে গত সাতদশক ধরে যে তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলায় রাজ করেছে তারা সকলেই মূলত ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস রাখে।
-
সমাজে ও রাজনীতিতে সৌজন্যতা কি মরে যাচ্ছে?
২০১৬ তে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে তাঁর সেই কুখ্যাত, কুৎসিততম ভাষা ব্যবহার করছিলেন, ঠিক তখন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীথ জে বাইবি (Keith J. Bybee) তাঁর 'How Civility Works' (সৌজন্যতা কী করে সফল হয়) বইতে বেশ কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন তুলেছিলেন। তিনি তাঁর দেশ কি করে ধাপে ধাপে এক অসভ্য বর্বর রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। সাধারণ মানুষের উগ্র ব্যবহার থেকে শুরু করে তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের বেশ কয়েকটি দিক তুলে ধরেছিলেন। তিনি অন্যান্য বিষয়ের সাথে সামাজিক মিডিয়ার ভূমিকা ও অশালীন ভাষার ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করেছেন কিন্তু তিনি গবেষক, তাই নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেন নি বা ইতিবাচক প্রস্তাবও দেন নি।
-
“হাঁই মারো, মারো টান” - আইএনএ-তে মুসলিম সৈন্য বাড়ায় নেতাজি সন্তোষ প্রকাশ করেন
জানি না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জুলিয়াস সিজ়ারের সেই বিখ্যাত তিনটি কথা ‘ভেনি ভিডি ভিচি’, যার অর্থ ‘আমি এলাম, আমি দেখলাম, আমি জয় করলাম!’ শুনেছেন কি না। তাঁর কলকাতার ঝাঁকিদর্শনের শেষে মনে হয় মাথায় এই উক্তিটিই ঘুরছিল। যদিও গণতন্ত্রে জয়-পরাজয়ের ব্যাপারটা সিজ়ারদের হাত থেকে সম্পূর্ণ ভাবে নিয়ে নিয়েছেন ভোটাররা। নির্বাচনের আগে কলকাতা এসে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর উদ্যাপন উদ্বোধন করে বাংলার মানুষের হৃদয়ে পৌঁছবার এই গরম গরম তৎকালের টিকিট তিনি ছাড়বার পাত্র নন।
-
শেষ অবধি তিনি মাথা উঁচু রেখেছিলেন
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের দুঃখজনক মৃত্যুর পর ওঁকে নিয়ে প্রচুর লেখা বেরিয়েছে, আরও নিশ্চয় বেরোবে। এই মাপের একজন অভিনেতা, আবৃত্তিকার বা সম্পূর্ণ বাচিক শিল্পী পাওয়া সত্যিই বিরল। আর তার সাথে সাথে তিনি যে কবি, নাট্যকার ও প্রকাশকও ছিলেন তা সাধারণ লোক বোধ হয় খুব বেশি জানেন না। এত জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও তিনি সারা জীবন একেবারে সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙাlলিই থেকে গেলেন। ছিলেন এক স্পষ্ট সহজ স্বচ্ছ মানুষ। আর্থিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা বা পদের লোভ ছিল না বলেই তাঁকে কেউ বাগে আনতে পারেনি। তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ ও স্বাধীনতা সম্পুর্ন না হলেও যথেষ্ট বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। সংস্কৃতির জগতে এত লোককে দেখেছি তাঁদের নীতি ও বিশ্বাসকে বেচে দিতে, যে সত্যি সত্যি ঘৃণা লাগে। এই রাজ্যে ২০১১তে যেই মুহূর্তে বামেদের ৩৪ বছর শাসনের সমাপ্তি হল দেখা গিয়েছিল এই রঙবদল। খুবই দৃষ্টিকটু আর অনেক খানি নির্লজ্জ ভাবে হয়েছিল।
-
যাঁরা তখন গাঁধীর বিরুদ্ধে ছিলেন
সরকারি মতে আজ মহাত্মা গাঁধীর জন্মের সার্ধশতবর্ষের উদ্যাপনের সমাপ্তি। এই কোভিড সংক্রমণের মাঝেও বেশ ঘটা করে উৎসব অনুষ্ঠান নিশ্চই হবে, অন্তত টিভির পর্দার জন্য। প্রচুর অর্থের বিনিময়ে যে সব কার্যক্রম ভারত সরকার গত দু’বছর ধরে কার্যকরী করলেন, সেইগুলি কতটুকু সফল হয়েছে আর সাধারণ মানুষকে গান্ধীর ভাবধারার প্রতি আকর্ষিত করেছে, তা বিচার করে কোনো লাভ নেই, শোনার লোকের অভাবে। মূর্তি স্থাপনেরও খুব একটা সুযোগ নেই, কেননা বিগত ৭২ বছরে এমন কোনো শহর বা গঞ্জ বাকি নেই, যেখানে গান্ধীকে নিয়ে ভাস্কর্যের নিদর্শন দেখা যায় না। রাস্তার নামকরণ আমাদের একটা জাতীয় বদ্ধসংস্কার, কিন্তু এ ব্যাপারেও খুব একটা অবকাশ নেই — আমরা তো কত যুগ আগেই বিভিন্ন রাজ্যে প্রধান সড়কের নাম এম জি রোড করে ফেলেছি।
-
স্বাধীনতা সংগ্রামের তীব্র বিরোধিতা করেছিল সঙ্ঘ পরিবার
এই স্বাধীনতা দিবসেও আমরা নিশ্চয় দিল্লির লালকেল্লা থেকে প্রচুর ছাতি ফোলানো গর্বের কথা শুনব আর জাতিপ্রেমের ফোয়ারার আবেগে নিজেদের ভাসিয়ে দেওয়ার বাণীও পাব। কিন্তু যখন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর শহিদদের স্মরণ করবেন, তিনি কি এই ইতিহাসের সম্পূর্ণ সত্য ঘটনাগুলি বলবেন? তিনি ভুলেও আমাদের বলবেন না যে, তাঁর দলের নিয়ন্ত্রণকারী ও প্রেরণাদায়ক সংগঠন ওই সংগ্রামে অংশগ্রহণ তো করেনি বটেই, উপরন্তু কয়েক স্থানে বাধাও দিয়েছে? রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ বা আরএসএস-এর ভূমিকা বুঝতে গেলে তার দ্বিতীয় সরসঙ্ঘ-চালক এম এস গোলওয়ালকরের প্রবন্ধ ‘এক বীর্যবান জাতীয়তার দিকে’ পড়তে হবে। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইংরেজ রাজশক্তির বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলন করাকে তাঁরা জাতীয়তাবাদ বলে মনে করেন না।
-
শোনার অভ্যেসটুকু থাকলে
পরিযায়ী শ্রমিকরা হয়তো এটা তাঁদের পরম সৌভাগ্য বলে মনে করবেন যে, লকডাউনের ৭৫ দিন পরে দেশের বিচারালয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁদের দুঃখ স্বীকৃতি পেল। এর আগে যত বার উচ্চতম ন্যায়ালয়ের সামনে তাঁদের মর্মান্তিক অবস্থার কথা বলা হয়েছে, তত বারই অনেক বকুনি শুনতে হয়েছে। মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে আকস্মিক ফতোয়ার পর থেকেই যখন পরিস্থিতি বেসামাল হতে আরম্ভ করল, তখনই বেশ কিছু জনমুখী প্রতিষ্ঠান ও কতিপয় সুপরিচিত ব্যক্তি ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। কিন্তু তখনও সরকার পক্ষের কথাই মান্য হয়।
-
করোনা সংক্ৰমণ আর সাম্প্রদায়িক বিষ
এই ভয়াবহ মহামারির সময়ে আমরা অনেকেই আশা করেছিলাম যে আমাদের মধ্যে এখন ধর্মের, জাতির ও ভাষার বিভাজন ভুলে একসঙ্গে মাঠে নামব। যারা এই সব ভাগাভাগি থেকে লাগাতার রাজনৈতিক সুবিধে খুঁজে বেড়ায়, তারাও এই যুদ্ধে শামিল হবে। ভেবেছিলাম, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার সংগ্রামে যখন সম্পূর্ণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে, তখন অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ বা প্রকাশ করার অবকাশ থাকবে না। কিন্তু এই ভ্রান্ত ধারণা কাটতে বেশি সময় লাগেনি। প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় হুঁশিয়ারির পরের দিন থেকেই হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুক ভরে গেল মুসলিম বিরোধী ছবি আর ভিডিয়োতে। উগ্র হিন্দুবাদীরা উঠেপড়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করল যে ভারতবর্ষের মুসলিম পাড়ায় কী রকম বেপরোয়া ভাবে লকডাউন অমান্য করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কয়েক কোটি মানুষের মধ্যে বার বার ছড়ানো হল এই মনগড়া মিথ্যে ছবিগুলি।
-
এক সঙ্গে কাজ করার সময়
একটাই বিপর্যয়ে সমস্ত অঞ্চলের সমস্ত বর্গের ভারতবাসী বিপন্ন— এমন ঘটনা আমাদের গোটা ইতিহাসে এই প্রথম ঘটল। কোনও যুদ্ধেরই এমন প্রভাব পড়েনি। এমনকি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেরও নয়। চিনের সঙ্গে এক বার, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন তিন বার, তাতেও নয়। সব যুদ্ধই লড়েছেন সৈনিকরা, রণাঙ্গনে দাঁড়িয়ে। দেশের সর্বত্র সবাইকে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে, এমনটা এই প্রথম। করোনা মৃত্যুতে গণতন্ত্র এনেছে, মর্যাদা কিংবা ক্ষমতা, কাউকেই সে পাত্তা দেয়নি। শুধু এ দেশে নয়, দুনিয়া জুড়ে। ফলে আমাদের আতঙ্ক একেবারে সর্বগ্রাসী। এই বিপদের মোকাবিলায় আমাদের তাই ঐক্য চাই, চাই দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনও তার দেখা মিলছে না। এই বিষয়ে একসঙ্গে কথা বলতেই জি-২০ গোষ্ঠীর দেশগুলি অনেক সময় নিয়েছিল।
-
ভারতের সেক্যুলারিজম সংকটে
অনেকেই মনে করেন দিল্লীর সদ্য সমাপ্ত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যাতে পঞ্চাশ জনের মৃত্যু হয়েছে এই সরকারের চরম অকৃতকার্যতার এক নিদর্শন। কিন্তু এই ধারণা বোধহয় ঠিক নয়। এটা আসলে তাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনার জয় এবং বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা করছে বুঝতে শাসক দল আমাদের কি বার্তা পৌঁছতে চেয়েছে এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার মাধ্যম। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ সর্বপ্রথম আমাদের স্পষ্ট করে দেখিয়েছেন যে তাঁরা ভারতের মুসলমানদের কি ভাবে নির্বিকারে পুলিশের সামনেই সাফ করে দিতে পারেন। কেউ তাদের রুখতে পারবে না।
-
শ্যামাপ্রসাদকে নিরপেক্ষ মূল্যায়ন
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নামে কলকাতা বন্দরের নাম বদলানোর প্রস্তাব দেন, নিঃসন্দেহে সেই বিতর্কিত আইকনকে বাজি ধরতে চেয়েছিলেন তিনি। নাম বদলের ক্ষেত্রে এত মহান দেশনায়কদের ছেড়ে শ্যামাপ্রসাদের মতো সাম্প্রদায়িক নেতার নির্বাচন নিয়ে বাংলার দিকে দিকে জোরালো প্রতিবাদও হয়েছে।
-
ব্যক্তি প্রস্তুত, চেতনা জাগ্রত
গত ডিসেম্বরে যখন বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সে-সময় এই পত্রিকায় প্রকাশিত আমার এক নিবন্ধে লিখেছিলাম, “মোদী-শাহ যুগল কী ভাবে প্রত্যাঘাত করবেন সেটাও আমাদের অজানা। একটা আশঙ্কা অনেকের মনেই আছে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা।” (‘বহুত্ব, শেষ পর্যন্ত’, ২৭-১২)। আজ যখন সেই ‘দাঙ্গা’ সফল ভাবে কার্যকর করা হচ্ছে, প্রাণহানিও হচ্ছে, তখন খুব গভীর ভাবে বোঝা প্রয়োজন যে, আমাদের লড়াইটা আসলে কার বিরুদ্ধে।
Page 3 of 6