Festival & Celebrations | পার্বণ ও উদ্যাপন
-
মহামারী অতীত, মা শীতলা কালজয়ী
যাঁ রা মনে করেন, শীতলা নিতান্তই গ্রামের অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের আরাধ্য রকমারি স্থানীয় দেবদেবীর এক জন, তাঁদের জানা নেই, তিনি গোটা ভারতে পূজিত হন। কেবল দক্ষিণ ভারতের কিছু এলাকায় তাঁর পুজো হয় না, কারণ সেখানে সর্বার্থসাধিকা দেবী মারিয়াম্মার রাজত্ব। স্কন্দপুরাণ ও ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের মতো কয়েকটি প্রাচীন পুরাণে শীতলার কথা আছে, সেখানে তাঁকে গুটিবসন্তের (স্মল পক্স) নিয়ন্তা হিসেবে দেখানো হয়েছে। যজ্ঞের আগুন থেকে তাঁর উদ্ভব, এবং ভগবান ব্রহ্মা কেবল তাঁকে নয়, তাঁর সহচর জ্বরাসুরকেও পুজো করার জন্য মানবজাতিকে উপদেশ দিয়েছিলেন।
-
সরস্বতী- নদী ও দেবী
যুগে যুগে বাঙালি ছাত্রছাত্রীরা মা সরস্বতীকে মনেপ্রাণে ডেকেছে, পরীক্ষাটা যেন ভাল হয়। সরস্বতীকে আমরা ঘরের মানুষ হিসেবে দেখি। তিনি কিন্তু যে সে দেবী নন। বৈদিক যুগের যে গুটিকয়েক দেবদেবীর পুজো এখনও হয়,সরস্বতী তাঁদের এক জন। আজ বাংলার বাইরে ভারতের অন্যান্য জায়গায় তিনি বিশেষ পূজিত নন, অথচ সুদূর জাপান আর বালি দ্বীপে তিনি এমন আরাধিত!
-
কোথা থেকে এল বড়দিন আর সান্তা ক্লস
নানা রঙের আলোয় আর কাগজের তারায় পার্ক স্ট্রিট সেজে উঠেছে, কলকাতায় আনন্দময় বড়দিন এল। অনেকেই এই দিন সাহেবপাড়ায় সন্ধেটা কাটাবেন, ধর্মপ্রাণরা সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে যাবেন মধ্যরাত্রির উপাসনায়। খ্রিস্টের জন্মদিনে শুরু হবে এক সপ্তাহের উত্সব, নিউ ইয়ার্স-এ যার শেষ।
-
ভাইফোঁটা
ভাইবোনের পরস্পর প্রীতি জানানোর জন্য ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা রক্ষাবন্ধনের মতো অনুষ্ঠান ভারতের বাইরে বিশেষ কোথাও নেই। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উত্তর ভারতে ভাই দুজ নামে পরিচিত, বাংলায় ভাই ফোঁটা, মহারাষ্ট্র, গুজরাত ও কোঙ্কণ এলাকায় ভাই বীজ বা ভাউ বীজ। নেপালে ভাই টীকা তো প্রায় দশমী বা দশেরার মতো বড় ব্যাপার। দক্ষিণ নেপালে একে যম দ্বিতীয়াও বলা হয়। বা
-
অসুরকেও বাপের বাড়ি টেনে আনলে মা?
একটা জিনিস পুজোর সময় আমাদের সকলেরই চোখে পড়ে। মা দুর্গা মহিষাসুরের সঙ্গে ধুন্ধুমার লড়াই করছেন, অথচ তাঁর ছেলেমেয়েরা নিতান্ত উদাসীন ভাবে পাশে দাঁড়িয়ে। সুদর্শন কার্তিক তাঁর অস্ত্র তোলেন না, গণেশের মুখে তো একটা হাসির আভাস, লক্ষ্মী নিজের ঝাঁপিটা আরও শক্ত করে চেপে ধরেন, সরস্বতীও বীণা হাতে দিব্যি দাঁড়িয়ে থাকেন। এই অদ্ভুত দৃশ্যের অর্থ বুঝতে ইতিহাসের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথমে বাইরের ইতিহাস, তার পর ঘরের।
-
আশ্বিনের শারদপ্রাতে
সবচেয়ে তর্কবাগীশ বাঙালিটিও নিশ্চয় মানবেন, মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের চণ্ডীপাঠ এক বিরল অনুষ্ঠান, যা আমাদের সাংস্কৃতিক অতীতের সঙ্গে যোগসূত্র রেখে চলেছে। ১৯৩২-এ যখন মহিষাসুরমর্দিনী শুরু হয়, আকাশবাণীর তখনকার প্রোগ্রাম ডিরেক্টর নৃপেন্দ্রনাথ মজুমদার বোধ করি ভাবতেও পারেননি, এ অনুষ্ঠান এতটা সফল হতে চলেছে। আকাশবাণীতে যাঁদের সিরিয়াস আড্ডা থেকে এই অনুষ্ঠানের ভাবনাটা এসেছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, বাণীকুমার, ‘গল্পদাদু’ যোগেশ বসু, রাইচাঁদ বড়াল এবং অবশ্যই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।
-
জীবিত ও মৃত
কাল ২ নভেম্বর। মৃতেরা এই দিন দুনিয়া জুড়ে এক আশ্চর্য ঐক্য রচনা করে। খ্রিস্টানদের তো এটি ‘অল সোল্’স’ ডে’। এ দিন তাঁরা প্রয়াত স্বজনদের স্মরণ করেন, তাঁদের সমাধিতে ফুল রাখেন, দীপ জ্বালান, সমাধিক্ষেত্রগুলি আলোকয় আলোকময় হয়ে ওঠে। আমরা খেয়াল করি না, পৃথিবীর বহু অঞ্চলের মানুষ মনে করেন, অক্টোবর-নভেম্বরের এই সময়টাতেই ‘জীবিত ও মৃতের ভুবনের মধ্যে সীমারেখাটা ক্ষীণতম হয়ে ওঠে, কারণ বিদেহী আত্মারা এই সময় তাঁদের জীবিত স্বজনদের কাছে ফিরে আসেন।’
-
‘ঈশ্বরের কাছে পৌঁছয় কেবল ভক্তি’
পবিত্র হজ-এর মাসের দশম দিনে পালিত হয় ইদ-উল-জুহা। অন্য নাম ইদ-আল-আদা। এটি চার দিনের উৎসব। মক্কার পূর্ব দিকে মাউন্ট আরাফত থেকে হজযাত্রীদের নেমে আসার সঙ্গে এই উৎসবের সমাপতন ঘটে। পারস্যে এর নাম ইদ-এ-গোরবান, তুরস্কে কুরবান বয়রামি, বলকান অঞ্চলে কুরবান বজরম, মান্দারিন চিনা ভাষায় একে বলে কুয়েরপাং চিয়ে, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় হারি রায়া কোরবান, বাংলায় কোরবানির ইদ।
-
গণেশ চতুর্থী
এ দেশে হিন্দু ক্যালেন্ডারের ভাদ্রপদ মাসে শুক্লা চতুর্থী গণেশ বা বিনায়ক চতুর্থী হিসেবে পালন করা হয়। কলকাতার মানুষ গণেশ চতুর্থীকে তুচ্ছ করলে ভুল করবেন। সর্বভারতীয় পরিসরে এটিই দুর্গাপুজোর একমাত্র যথার্থ প্রতিদ্বন্দ্বী। তা ছাড়া, এই উত্সব দুর্গাপুজোর চেয়ে অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। দুর্গাপুজো প্রধানত বাঙালির উত্সব, বাংলার বাইরে বা বিদেশেও তা-ই।
-
রাখি
বোনেরা ভাইদের হাতে রাখি পরিয়ে দেওয়ার জনপ্রিয় উত্সবটি দেখে দুটো কথা মনে হয়। এক, আমাদের ধর্ম ও ইতিহাসের কাহিনিতে ভাইয়েরাই তো চিরকাল বোনদের রক্ষা করে এসেছে, রক্ষাবন্ধন নামক অনুষ্ঠানে ব্যাপারটা তবে হঠাৎ উল্টে গেল কেন?
-
কেন আমরা আর একটু জানব না
রমজান মাস এবং ইদের চাঁদ, এইটুকু আমরা জানি, কিন্তু ইদ-উল-ফিতর-এর উত্স সম্বন্ধে অনেকেরই বিশেষ ধারণা নেই। ভারতের বৃহত্তম ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের এই বিরাট উত্সবটি সম্পর্কে আর একটু জানলে মন্দ হয় না। আল্লাহ্-র দূতের মুখে কোরান প্রথম শোনার ঘটনাটির স্মারক হিসেবে চান্দ্র ক্যালেন্ডারের নবম মাসকে হজরত মহম্মদ রমজানের উপবাসের জন্য চিহ্নিত করেছিলেন।
-
জামাই রহস্য
এই দিনটাতে আমার মা তাঁর চঞ্চল ছেলেমেয়েদের শীতলপাটিতে বসিয়ে শোনাতেন, কী ভাবে মা ষষ্ঠী সমস্ত শিশুদের মঙ্গল করেন, তাদের দীর্ঘ জীবন দেন। তিনি কয়েকটি মন্ত্র পড়ে একটা অদ্ভুত দেখতে দূর্বাঘাসের ছোট্ট চামর দিয়ে আমাদের গায়ে মাথায় পুণ্যবারি ছিটিয়ে আশীর্বাদ করতেন, মুঠো ভরে ফলমূল দিতেন। বিয়ের পরে আমার বনেদি ঘটি শ্বশুরবাড়িতে দেখলাম, ওঁরা আমার মায়ের সন্তান-ষষ্ঠীকে একটা নিতান্ত বাঙাল ব্যাপার বলে মনে করেন, তাঁদের কাছে এটা একেবারেই জামাইয়ের দিন। আমার অবশ্য তাতে কোনও সমস্যা ছিল না, কারণ আমার শাশুড়ি সে দিন আমার পাতে অন্তত পাঁচ-ছ’রকমের মাছ-মাংস এবং সমানসংখ্যক মিষ্টি সাজিয়ে খেতে বসাতেন। কব্জি ডুবিয়ে তার সদ্ব্যবহার করতাম।
-
অক্ষয় তৃতীয়া
একশো বছরেরও বেশি আগে ব্রিটিশ পর্যবেক্ষকরা লক্ষ করেছিলেন, ‘ভারত জুড়ে বৈশাখের শুক্লপক্ষের তৃতীয় দিনে অক্ষয় তৃতীয়া পালন করা হয়। মানুষের বিশ্বাস, এই দিন স্নান করে ব্রাহ্মণকে পাখা, ছাতা এবং অর্থ দান করলে অক্ষয় পুণ্য অর্জিত হয়। ফলে এই তিথি উদ্যাপন অত্যন্ত জনপ্রিয়।’
-
বৈশাখী নিউ ইয়ার
ভারতের অসামান্য বৈচিত্রের উৎকৃষ্টতম প্রমাণ হল এত রকমের ক্যালেন্ডার এবং ‘নববর্ষ’। বহু ভাষা এবং সংস্কৃতি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধীরে ধীরে একে অন্যের সঙ্গে মিলেছে, তাদের উপর কোনও একমাত্রিক তকমা চাপিয়ে দেওয়া যায়নি। কিন্তু আমরা দেখব, এই বহু ‘নববর্ষ’-এর বৈচিত্রের মধ্যে ক্রমশ একটা ঐক্যের ধারণা তৈরি হয়েছে।
-
ইস্টারের জন্ম কিন্তু খ্রিস্টের অনেক আগে
একটা প্রশ্ন প্রায়ই ওঠে: খ্রিস্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার দিনকে ‘গুড ফ্রাইডে’ কেন বলা হয়? এমন যন্ত্রণাদায়ক অবসানের মধ্যে ‘শুভ’টা কী? বস্তুত, জার্মানিতে এবং অন্য কোথাও কোথাও খ্রিস্টধর্মের কিছু ধারায় এই দিনটির নাম ‘বেদনাময় শুক্রবার’। ইংরেজি নামটির একটি ব্যাখ্যা হল, এটি ‘গড’স ফ্রাইডে’র পরিবর্তিত রূপ। আবার, পবিত্র (‘হোলি’ বা ‘পায়াস’) অর্থে প্রাচীন ইংরেজিতে ‘গুড’ শব্দটি ব্যবহৃত হত, নামটা সেখান থেকেও এসে থাকতে পারে। এটিই ইস্টার পরবের প্রধান দিন।
-
হোলি
ভারতবাসী সারা বছর ধরে যত উত্সব করে, তার মধ্যে হোলির সঙ্গে শাস্ত্রের সম্পর্ক সবচেয়ে কম আর বেলাগাম হুল্লোড় সবচেয়ে বেশি। ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে এই উত্স, সাধারণত আগের রাত্রে হোলিকা দহন দিয়ে এর সূচনা হয়, তার পর সারা দিন অসহায় মানুষজনের উপর আবির এবং রঙের বর্ষণ চলে, শেষ হয় মিষ্টি এবং অন্য নানা খাদ্য ও পানীয়ের উল্লাসে। পণ্ডিত এস এম নটেশ শাস্ত্রীর বক্তব্য: ‘এর সঙ্গে কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের কিছুমাত্র যোগ নেই, তবে নির্বোধ আচরণ আছে প্রভূত পরিমাণে।’
-
বুদ্ধপূর্ণিমা
কূটনীতিতে ‘সফ্ট পাওয়ার’ কথাটা খুব প্রচলিত। একটি দেশ অন্যান্য দেশের উপর নিজের সাংস্কৃতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারলে যে কূটনৈতিক শক্তি অর্জন করে, সেটাই সফ্ট পাওয়ার। অনেকের মতেই, ভারতের এই ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করা উচিত। কী ভাবে? মনে রাখা দরকার, সভ্যতার ইতিহাসে ভারতের সবচেয়ে শক্তিমান সাংস্কৃতিক রফতানিটি হল বৌদ্ধ দর্শন, যে দর্শন শান্তি ও অহিংসার আদর্শকে তুলে ধরে।
-
শিবরাত্রি
পুরাণের শিব প্রধানত পুরুষের আরাধ্য। উপোস করে শিবের মাথায় জল ঢেলে শিবরাত্রি পালনের যে ব্রত মেয়েদের শেখানো হয়েছে, সেটি পিতৃতন্ত্রের ঐতিহাসিক কারসাজি।
-
মকর সংক্রান্তি
ভারতে ‘বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য’ নিয়ে আমরা অনেক কথা বলে থাকি, কিন্তু কথাটার সত্য অর্থ উপলব্ধি করতে চাইলে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। যেমন, এমন নানা উত্সব আছে, যেগুলির ঐতিহাসিক উত্স বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম, অথচ অনেক জায়গাতেই যেগুলি বছরের কোনও একটি সময়েই উদ্যাপিত হয়ে আসছে।
Page 2 of 2